সম্প্রতি Disney Plus এর লোকি সিরিজটা খুব জনপ্রিয় হয়েছে। আমি লোকির পুরনো ভক্ত। সে প্রথমে আবির্ভুত হয়েছিলো খলনায়ক হিসেবে, কিন্তু ২০২১ সালে লোকির জন্য ডেডিকেটেড সিরিজ থেকে আমরা দেখতে পাই- সে আসলে একজন কোমল হৃদয়ের মানুষ। সে একা থাকতে চায় না, একাকীত্ত্বকে সে ভয় করে।লোকি প্রেমে পড়ে তারই আরেক ভ্যারিয়ান্ট সিলভি-র। এই গল্পে ভ্যারিয়ান্ট জিনিসটার সহজ ব্যাখ্যা হলো – ধরেন, এই ইউনিভার্স এ আপনি যেরকম আছেন, আরেকটা ইউনিভার্সেও আরেকটা ‘আপনি’ আছে্ন, এরকম অগনিত ইউনিভার্সে অগনিত ‘আপনি’ আছেন। লোকির কাহিনীতে সিলভি হলো আরেকটা ইউনিভার্সে লোকির আরেকটা ভার্সন। সেই সিলভির প্রেমে যখন লোকি পড়ে, বলাই বাহুল্য- লোকি এতটাই স্বার্থপর যে সে নিজের প্রেমে নিজে পড়েছে, একমাত্র লোকির দ্বারাই সেটা সম্ভব!
লোকির আরেকটা ক্ষমতা আছে। সে Time Slip করতে পারে। চাইলেই সে এক সময় থেকে পুরো অন্য সময়ে চলে যেতে পারে। এটা প্রথমে সে নিয়ন্ত্রন করতে না পারলেও এখন সে এটা শিখে গেছে। লোকি সময়ের কোন পয়েন্টে থাকবে তা তার নিয়ন্ত্রনে।
লোকি কাহিনী বাদ। কাহিনী এবার হুমায়ুন আহমেদ এর। তার লেখা চরিত্র মিসির আলি সিরিজের একটা গল্পের নাম – নিষাদ। এই বইটা লেখা হয় ১৯৮৯ সালে। গল্পে মুনির নামের এক যুবক মিসির আলিকে তার এক সমস্যার কথা জানাতে আসে। তার সমস্যা অদ্ভুত। মুনিরের বাবা এপেন্ডিসাইটিসের কারণে মারা যায় যখন, তখন সে ক্লাস নাইনের ছাত্র। ঠিক সময়ে ডাক্তার না আসার কারণে তার বাবা বাঁচতে পারে নাই। এত বছর পরে সে একদিন খেয়াল করে তার পৃথিবী পাল্টে গেছে, সে আজ আবার ক্লাস নাইনের ছাত্র এবং তার বাবা আবার মৃত্যু শয্যায়। সে চাইলেই এবার ঠিক সময়ে ডাক্তার খুঁজে নিয়ে এসে বাবাকে বাঁচাতে পারে। ঘটেও তাই। তার বাবা এবার বেঁচে যায়। শুধু তাই নয়। এক জীবনে মুনির অবিবাহিত, আরেক জীবনে মুনিরের বিয়ে হয় কিন্তু চার বছরের সন্তান মারা যায়, আবার আরেক জীবনে সেই সন্তান বেঁচে থাকে। মুনির চাইলেই এক জীবন থেকে আরেক জীবনে ভ্রমণ করে। প্রথমে এই ভ্রমণ তার নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও একসময় সে এই ভ্রমণ শিখে ফেলে। এমতাবস্থায় মিসির আলি নিজের নোটবুকে লেখেন-
“একজীবন : বহুজীবন….জীবনের ধারা একটি না হয়ে কি অনেকগুলো হতে পারে না? ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করি। মনে করি, মুনির নামের একটি ছেলে বড় হচ্ছে। শৈশবে তার পিতৃবিয়োগ হল। সেই মুহূর্ত থেকে যদি তার জীবন দুটি ভাগে ভাগ হয়, তাহলে কেমন হয়? একটি ভাগে ছেলেটির পিতৃবিয়োগ হল, অন্য ভাগে হল না–বাবা বেঁচেই রইলেন। দুটি জীবনই সমানে প্রবাহিত হতে লাগল।”
The Infinite Timeline in Loki! জি হ্যাঁ। প্রায় সেইম ধরনের কনসেপ্ট ব্যবহার করা হয়েছে “নিষাদ” আর “লোকি”তে। একটা ফারাক অবশ্য আছে। লোকি টাইমলাইন A থেকে টাইমলাইন B তে গেলে সেখানেও আরেকটা লোকি ভ্যারিয়ান্ট থাকে। মিসির আলির এই গল্পে মুনির যখন টাইম স্লিপ করে, এমনটা হয় না। সেখানে টাইমলাইন A এর মুনিরই টাইমলাইন B তে থাকে। পদার্থবিজ্ঞানের মানুষজনেরা এইসব থিউরিটিক্যাল বিষয় আলাদা করে ব্যাখ্যা করতে পারেন, তবে একজন পাঠক+ দর্শক হিসেবে আমার তো উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে বটেই।
লোকিকে এই অসীম ক্ষমতা নিয়ে শেষমেষ একা হয়ে যেতে হয়। মুনিরকেও মারা যেতে হয়। আমাদের এই প্রকৃতি আমাদেরকে অসীম ক্ষমতা বইতে দেয় না। অসীম ক্ষমতা বইবার শক্তি আমাদের নেই।